রোজায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যায় না কেন?

রমজান মাসে দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতা চলে। এর সঙ্গে পণ্যের সরবরাহ বা মজুতের সম্পর্ক নেই। অর্থনীতির কোনো সূত্রও কাজ করে না। সবকিছু ব্যবসায়ীদের হাতে। তারা যা চান তাই হয়। তবে কয়েক বছর আগে রোজার মধ্যে দাম বাড়ত। আর এখন রোজার একমাস বা কয়েক সপ্তাহ আগেই বাড়িয়ে দেওয়া হয়। অবশ্য শাকসবজি, বিশেষ করে শসা, টমেটো, লেবু, কাঁচামরিচ- এগুলোর দাম এবারও রোজার মধ্যে বেড়েছে।

সবজি বিক্রেতা রুবেল মিয়া বলেন, “এবার রোজায় শসা, টমেটো, বেগুন ও লেবুর দাম বেড়েছে। ২০ থেকে ৩০ টাকা হালি যে লেবু, রোজায় তা হয়েছে ১০০-১২০ টাকা। আর ৫০ টাকার শসা এখন ১০০-১২০ টাকা।” তার কথা, “রোজায় সরবরাহ কম না থাকলেও দাম বেড়েছে। আমরা বেশি দামে কিনি তাই বেশি দামে বিক্রি করি।”

এবারের রোজায় সবচেয়ে বড় ভেলকি দেখিয়েছে খেজুর। আমদানি শুল্ক কমিয়েও খেজুরের দাম কমানো যায়নি। উল্টো বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি শুল্ক কমালেও খেজুরের দাম বেশি দেখিয়ে শুল্ক হিসাব করা হয়, তাই তারা আরও ক্ষতির মুখে পড়েছেন। শেষ পর্যন্ত তাদের এলসি দেখে খেজুরের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও সেই দামে খেজুর পাওয়া যায় না কোথাও। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সাধারণ মানের খেজুর প্রতিকেজির দাম বেধে দিয়েছে ১৫০-১৬৫ টাকা। এটা বস্তায় করে আনা খোলা খেজুরের দাম। কিন্তু খোলা খেজুর পাওয়া কঠিন।

কলাবাগানের দোকানদার মিন্টু মিয়া বলেন, “আমি সব প্যাকেট করে বিক্রি করব। তাহলে তো আর খোলা খেজুরের দামে বিক্রি করতে হবে না।” তার কথা, “সরকার যাই বলুক, ৩০০ টাকা কেজির নিচে এখন আর কোথাও খেজুর নেই। আর চিনির দাম রোজার আগেই কেজিতে দুই টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এখন আমরা ১৫৫ টাকা কেজি বিক্রি করছি।”

দামের তুলনা

বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান রোজার মাসের পণ্যের দাম আলাদা করে সংরক্ষণ করে না। যে হিসাব রাখে তা হলো, বছরের গড় হিসাব।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) তথ্য বলছে, ২০০৯ সালে সাধারণ মানের এক কেজি চালের (মোটা চাল) দাম ছিল সর্বোচ্চ ৩২ টাকা। বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটার ছিল ৮৫ টাকা, গরুর মাংসের কেজি ২১৮ টাকা, খাসির মাংস ৩৩২ টাকা, ডিমের হালি ২৮ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৩৮ টাকা, আমদানি করা পেঁয়াজ ২৯ টাকা, আলু ২৭ টাকা, প্যাকেট চিনি ৪৪ টাকা, আপেল ১২০ টাকা কেজি, মসূর ডাল (দেশি) ১১০ টাকা, ছোলা ৬১ টাকা, বয়লার মুরগি ১১৮ টাকা কেজি।

২০১৬ সালে সাধারণ মানের এক কেজি চালের (মোটা চাল) দাম ছিল সর্বোচ্চ ৩৬ টাকা। বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটার ছিল ৯৮ টাকা, গরুর মাংসের কেজি ৪২৭ টাকা, খাসির মাংস ৬১৮ টাকা, ডিমের হালি ৩৪ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৩৯ টাকা, আমদানি করা পেঁয়াজ ২৭ টাকা, আলু ২৫ টাকা, প্যাকেট চিনি ১২১ টাকা, আপেল ১৪০ টাকা কেজি, মসূর ডাল (দেশি) ১৩৯ টাকা কেজি, ছোলা ৮৭ টাকা, বয়লার মুরগি ১৫১ টাকা কেজি।

২০২৪ সালে রমজান মাসে সাধারণ মানের এক কেজি চালের (মোটা চাল) দাম সর্বোচ্চ ৬০ টাকা। বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৬৩ টাকা লিটার, গরুর মাংসের কেজি ৭০০-৮০০, খাসির মাংস ১২০০, ডিমের হালি ৪৫ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৯০ টাকা, আলু ৩৫ টাকা, প্যাকেট চিনি ১৫৫ টাকা, আপেল ৩৮০ টাকা কেজি, মসূর ডাল (দেশি) ১৬০ টাকা কেজি, ছোলা ১২০ টাকা, বয়লার মুরগি ২২০ টাকা কেজি।

ক্যাবের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে মোটা চালের দাম বেড়েছে ১০০%, গরুর মাংসের দাম বেড়েছে ৩৫০%, সয়াবিন তেল ১০০%, মসূর ডাল ৫০%, ছোলা ১০০%। গড়ে সব পণ্যের দাম প্রায় ১০০% বেড়েছে।

এদিকে, টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরের মধ্যে এবারই রোজার বাজারে চিনি, খেজুর, ছোলা, পেঁয়াজ ও ডালের দাম সবচেয়ে বেশি। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে রোজার আগে বাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম ছিল ৭৮ থেকে ৮০ টাকা। এ বছর চিনির কেজি ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। তাতে এক বছরে চিনিতে খরচ বেড়েছে সর্বনিম্ন ৬০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬৭ টাকা।

টিসিবির হিসাবে, ২০২১ সালে রোজার আগে বাজারে ছোলার দাম ছিল কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। এ বছর দাম বেড়ে হয়েছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা। তাতে দুই বছরের ব্যবধানে ছোলার দাম বেড়েছে কেজিতে ২৫ থেকে ৪০ টাকা। তবে টিসিবির দামের চেয়ে বাজারে চিনি ও ছোলার দাম আরও বেশি।

পূর্বের খবর‘ডন ৩’ তে কিয়ারার সঙ্গে থাকছেন জাহ্নবিও
পরবর্তি খবরদৈনিক কতটুকু হাঁটা জরুরি